জিত সিং এই গল্পের মূল চরিত্র। পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে অন্তত একজন মোগল হত্যার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলে একটি দলের দেখা পায় সে। একটি ‘কালপী’ নামক জায়গার এই মানুষেরা রাজোয়ারায় বসবাস করতে করতে এক হিসেবে রাজপুত হয়ে গেছে। এক হাজার বন্দুকধারীর এই দলটিই আকবরের সেনাবাহিনীকে আঁটকে রেখেছিল অনেকক্ষণ। কিন্তু চিতোর পতনের পর তাঁরা সরে যাচ্ছে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য।
এ দলের দলপতি মৃত। একজন বৃদ্ধ ভারপ্রাপ্ত দলপতির কাজ করছে আর তাঁকে দিয়ে গেছে নিজের কন্যার দায়িত্ব। সে মেয়েটির নাম লীলা, লীলাবতী। লীলাবতী আর জিত সিং এর গল্প নিয়েই এ উপন্যাস।
বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে শ্রী পারাবত আগ্রহী পাঠকের কাছে পরিচিত নাম। সহজ সুন্দর বর্ণনা আর ইতিহাসের প্রতি সততা তাঁর বৈশিষ্ট্য। তিনি ইতিহাস লেখেন না, ইতিহাসের একটা ঘটনা বা সময়কে উপজীব্য করে একটা গল্প তৈরি করেন। তারপর সে গল্প উপস্থাপন করেন পাঠকের সামনে। যেহেতু ইতিহাসের নানা উপাদান, নানা ঐতিহাসিক চরিত্র জড়িয়ে থাকে গল্পের সাথে, তাই ইতিহাস এসেই যায়। সেক্ষেত্রে লেখক যথাসম্ভব বিকৃতি এড়িয়ে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন।
যেমন এ গল্পে আকবরের চিতোর বিজয় এবং নৃশংসতা দিয়ে শুরু হলেও গল্পের নানা জায়গায় তিনি আকবরের দোষ গুণের কথা তুলে ধরেছেন। রাজপুতদের সংগ্রাম, বীরত্বের কথার পাশাপাশি তাদের ঠুনকো আত্মাভিমান, বোকামির কথাও বলেছেন। অযথা কোন জাতি, বা চরিত্রের প্রতি বিদ্বেষ দেখা যায় না।
এই উপন্যাসের গল্পটা পুরোই কাল্পনিক যেখানে জিত সিং আকবরের সেনাদলে যোগ দিয়ে মোগল সাম্রাজ্যের ভেতরের কথা জেনে চিতোরকে সহায়তার চেষ্টা করে। এর পাশাপাশি চলে লীলাবতীর সাথে তাঁর প্রেম, মোগল দরবার, আকবর বীরবলের নানা গল্প নিয়ে সাজানো এ উপন্যাস। আছে অসংখ্য চরিত্র। সহজ সরল বাক্য এবং সুন্দর বর্ণনায় লেখা সাতশো পাতার বই তাই তরতর করে পড়া যায়।
এ বইতে ইতিহাস আছে খুব অল্প, পুরোটাই নিরেট গল্প। সে গল্পে চমৎকার চরিত্র চিত্রন আর নানা বাঁক, ঘাট প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে লেখাক নিয়ে গেছেন আমাদের এক পরিণতির দিকে। আরাবল্লীর পাহাড় থেকে এ যাত্রা শুরু হয়ে দিল্লী আগ্রা সিক্রিতে নিয়ে ফেলবে পাঠকদের। একটা চমৎকার ভ্রমণ।
No comments:
Post a Comment